মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন

রাকসু নির্বাচন করতে চান ছাত্রদলের পাঁচ অছাত্র

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে চান ছাত্রদলের পাঁচ নেতা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা হলেও কারোরই ছাত্রত্ব নেই। এজন্য তারা বিশেষ বিবেচনায় দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চেয়েছেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এক সমন্বয়কও একই সুযোগের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, রাকসু নির্বাচন বানচালের নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় গত বুধবার উপাচার্য বরাবর দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করার জন্য লিখিত আবেদন জমা দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার হাসান এবং সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না।

আবেদনপত্রে তারা উল্লেখ করেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে’ রাজনৈতিক হয়রানি ও কারাবরণের কারণে সুষ্ঠুভাবে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি তারা। তাই দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করার সুযোগ চান।

জানা গেছে, আবেদনকারীদের মধ্যে শফিক ও তুষার ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এবং রাহী, জহুরুল ও সোহাগ ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে আবেদন করেছেন। তবে মুন্নার বিভাগের নাম জানা যায়নি।

রাবিতে এক সময় দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করার সুযোগ থাকলেও পরে সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদল সভাপতি রাহী বলেন, ‘আমি দ্বিতীয়বার মাস্টার্সের জন্য আবেদন করেছি। সংগঠন চাইলে নির্বাচনে অংশ নেব।’

সাবেক সমন্বয়ক মুন্না বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাজপথে ছিলাম। ছাত্রত্ব শেষ হলেও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এজন্য ভর্তির সুযোগ চেয়েছি।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা রাকসু বানচালের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। তারা এর আগেও নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছে। যদি তারা দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ পায় তাহলে নতুন করে আবার সমস্যা দেখা দেবে। রাকসু আবার পিছিয়ে যেতে পারে বা নাও হতে পারে।’

সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘রাকসুর মনোনয়ন বিতরণ শেষ, এতদিন তারা কোথায় ছিলেন? রাকসু নিয়ে এক বছর ধরে আলাপ চলছে, তাদের উচিত ছিল তখন এগুলো নিয়ে কথা বলা। রাকসু নির্বাচনের আর কয়েকদিন বাকি। এখন এসব নিয়ে আলাপ রাকসু নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা ছাড়া কিছুই নয়। যদি সেকেন্ড মাস্টার্স করার সুয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে সেটা সবারই পাওয়া উচিত।’

আরেক সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘মূলত রাকসুকে একটি দীর্ঘ প্রসেসে নেওয়ার পরিকল্পনা এটা। এখন যদি সেকেন্ড মাস্টার্সের সুযোগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে রাকসু পিছিয়ে যাবে। এটা আমরা চাই না। ডাবল মাস্টার্স হোক আর যাই হোক, নির্বাচন ২৫ তারিখেই হতে হবে। ২৮ জুলাই রাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে। তাদের কি তখন হুঁশ ছিল না? তারা এখন এসব বিষয় সামনে আনছে কেন? সুতরাং আমার মনে হচ্ছে এটা রাকসু নির্বাচন বানচালের একটি প্রচেষ্টা।’

ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, এমন কোনো রেকর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই যে সেকেন্ড মাস্টার্সের আবেদন করতে পারবে। যদি চারজন করতে পারে তাহলে চার হাজারজনও করতে পারে। আমি নিজেও করতে পারি। কোনো দল বা ব্যক্তি এখানে বিষয় নয়, এটি ভর্তির একটি প্রক্রিয়া। এখানে যদি চারজন সুযোগ পায়, তাহলে আরো ৪০০ জন আবেদন করবে। তারাও ভর্তি হবে। আগে তারা সুযোগ পাক, তারপর দেখা যাবে কী হয়।

ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আসন্ন রাকসু নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যকে দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।’

উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘ছাত্রদলের চার নেতার আবেদন পেয়েছি। কোনো দল বা পক্ষের সুপারিশ নয়, দ্বিতীয় মাস্টার্সের বিষয়টি অ্যাকাডেমিকভাবে দেখা হচ্ছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved Meherpur Sangbad © 2025